এটি মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ। প্রতি মাসের শেষে, যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতিভিত্তিক সূচকগুলোর একটি — কোর PCE সূচক — প্রকাশ করা হয়, আর ইউরোপের ট্রেডারদের দৃষ্টি থাকে PMI ও IFO সূচকের দিকে। এগুলোকে মূল প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তবে এই সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণভাবে অতিরিক্ত আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে: যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে মিশিগান ইউনিভার্সিটির কনজিউমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স এবং কনফারেন্স বোর্ড কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্সও প্রকাশিত হবে।
এইসকল প্রতিবেদন হয় EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতাদের 1.07 জোনে মূল্যের কনসোলিডেশন ঘটানোর জন্য সমর্থন জোগাবে, অথবা ক্রেতাদের মূল্যকে 1.0800 লেভেলে ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
সোমবার
সোমবার মূলত PMI দিবস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জার্মানির উৎপাদন সংক্রান্ত PMI এখনও নেতিবাচক মানে রয়েছে (৫০ পয়েন্টের নিচে), তবে সামান্য উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে —যা 46.5 থেকে 47.1-এ পৌঁছাতে পারে। এটি ইউরোকে আংশিক ও প্রতীকীভাবে সহায়তা দিতে পারে। গত তিন মাস ধরে জার্মানির পরিষেবা সংক্রান্ত PMI ইতিবাচক মান প্রদর্শন করছে এবং মার্চ মাসেও এটি ৫০.০-এর ওপরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, পূর্বাভাস অনুযায়ী সূচকটি 52.3-এ পৌঁছাবে। EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এই সূচকটি যাতে ৫০-এর নিচে না নামে এবং নেতিবাচক মানে না পৌঁছায়। ইউরোজোনের সামগ্রিক PMI-ও জার্মানির প্রতিবেদনের ফলাফল অনুসরণ করছে — উৎপাদন খাতের সূচক এখনো ৫০.০-এর নিচে রয়েছে (47.6 থেকে 48.3-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে), এবং পরিষেবা খাতের সূচক ৫০.০-এর ওপরে রয়েছে (51.2 পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে)।
মার্কিন সেশনে, যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ মাসে উৎপাদন খাতে PMI প্রকাশিত হবে, এবং সূচকটি সামান্য হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে — যা 52.7 থেকে 51.9-এ নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এই সূচক গত দুই মাস ধরে বেড়েছে (জানুয়ারিতে নেতিবাচক মান থেকে বের হয়ে এসেছে), তাই সূচকটির সামান্য হ্রাসও ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, যদি এই সূচকের ফলাফল প্রত্যাশা ছাড়িয়ে বাড়ে, তাহলে ডলারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে — বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে দেশটির শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে (0.3% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হলেও 0.7% বেড়েছে)।
এছাড়াও সোমবার, ফেডের দুইজন কর্মকর্তার বক্তব্য দেবেন: আটলান্টা ফেড প্রেসিডেন্ট রাফায়েল বস্টিক (এই বছরে ভোটাধিকার নেই) এবং ফেডের গভর্নর মাইকেল বার (স্থায়ী ভোটার)। তারা সম্ভবত ফেডের মার্চ মাসের বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন, যেখানে ফেড ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তারা এখনই সুদের হার কমাতে যাচ্ছে না। তবে এই মন্তব্য শুধুমাত্র মে মাসের বৈঠকের জন্য প্রযোজ্য। ট্রেডাররা এখনো জুনে সুদের হার হ্রাসের আশা করছে। যদি বস্টিক এবং বার জুন সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তবে ডলার শক্তিশালী সমর্থন পেতে পারে।
মঙ্গলবার
মঙ্গলবার ইউরোপীয় সেশনে জার্মানিতে IFO সূচকগুলো প্রকাশিত হবে। দেশটির বিজনেজ ক্লাইমেট বা ব্যবসায়িক আবহ সংক্রান্ত সূচকটি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে 85.2-এ স্থির ছিল, তবে মার্চ মাসে সূচকটির 86.8-এ উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস দেয় হয়েছে — যা জুলাই 2024 সালের পর সর্বোচ্চ। IFO এক্সপেকটেশন সূচকটিও 85.4 থেকে বেড়ে 86.9-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসে জার্মানিতে অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল অংকের বিনিয়োগ প্যাকেজ অনুমোদনের কারণে এই আশাবাদী পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে "ঋণ" সংক্রান্ত নীতিতে শিথিলতা এবং একটি বিশেষ অবকাঠামো তহবিলের জন্য €500 বিলিয়ন বরাদ্দের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
মার্কিন সেশনে, কনফারেন্স বোর্ড কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্স প্রকাশিত হবে। গত মাসে এই প্রতিবেদনের ফলাফল ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, কারণ পূর্বাভাস 102.7 থাকলেও প্রকৃত ফলাফল মাত্র 98.3 ছিল। সূচকটি টানা তিন মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে, এবং মার্চেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি কমে 94.2-এ পৌঁছাতে পারে — যা ফেব্রুয়ারি 2021 সালের পর সর্বনিম্ন। কেবলমাত্র সূচকটি যদি অপ্রত্যাশিতভাবে 100.0-এর গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজিক্যাল রেঞ্জ ছাড়িয়ে যায়, তবেই ডলার শক্তিশালী সমর্থন পেতে পারে।
মঙ্গলবার ফেডের গুরুত্বপূর্ণ বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন: ফেডের গভর্নর আদ্রিয়ানা কুগলার (ভোটাধিকার রয়েছে) এবং নিউ ইয়র্ক ফেডের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস (ভোটাধিকার রয়েছে)।
বুধবার
বুধবারের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে EUR/USD পেয়ার সংক্রান্ত তেমন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট নেই। তবে এটি ব্রিটিশ পাউন্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন, কারণ যুক্তরাজ্যের বার্ষিক বাজেট এবং মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
EUR/USD-এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইভেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে মিনিয়াপলিস ফেড প্রেসিডেন্ট নিল কাশকারি (এই বছর ভোটাধিকার নেই) এবং সেন্ট লুইস ফেড প্রেসিডেন্ট আলবার্টো মুসালেম (ভোটাধিকার রয়েছে)–এর বক্তব্য।
বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার ট্রেডারদের দৃষ্টি ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত জিডিপি প্রতিবেদনের দিকে থাকবে। এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অনুমানের ফলাফল 2.3% ছিল। পূর্বাভাস অনুযায়ী সূচকটি সামান্য সংশোধিত হয়ে 2.4% হতে পারে। উল্লেখ্য, তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফল দ্বিতীয় অনুমানে 2.8% থেকে চূড়ান্ত হিসেবে 3.1%-এ উন্নীত করা হয়েছিল। যদি চতুর্থ প্রান্তিকের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তাহলে অর্থনৈতিক মন্দা সংক্রান্ত ঝুঁকি বৃদ্ধির মধ্যেই ডলার শক্তিশালী সমর্থন পেতে পারে।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বেকার ভাতা আবেদনের তথ্য প্রকাশিত হবে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এই সংখ্যা 221,000 থেকে 223,000 এর মধ্যে ছিল। এই সপ্তাহের পূর্বাভাস রয়েছে 225,000। যদি এই সংখ্যা 230,000 ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ডলার চাপের মধ্যে পড়তে পারে।
শুক্রবার
সপ্তাহের শেষ দিনের ট্রেডিংয়ে EUR/USD-এর মূল্যের উচ্চ মাত্রার ভোলাটিলিটি বা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত সূচক — কোর PCE ইনডেক্স প্রকাশিত হবে। জানুয়ারিতে এই সূচক 2.9% থেকে কমে 2.6% হয়। ফেব্রুয়ারিতে সূচকটি আরও হ্রাস পেয়ে 2.5%-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে — মিশিগান ইউনিভার্সিটির কনজিউমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স। ফেব্রুয়ারিতে এটি তীব্রভাবে হ্রাস পেয়ে 57.9-এ নেমে আসে (পূর্বাভাস ছিল 63)। মার্চ মাসে এটি কিছুটা পুনরুদ্ধার করে 61.5-এ পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে EUR/USD পেয়ারের মূল্য ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়ে শুক্রবারের সেশন শেষে 1.0816-এ নেমে এসেছে, যা সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ 1.0955 লেভেল থেকে কম। আসন্ন সপ্তাহের প্রধান প্রতিবেদনগুলো EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতাদের সমর্থন দিতে পারে, বিশেষত যদি ইউরোজোনের PMI ও IFO সূচকগুলোর মান নেতিবাচক অঞ্চলে পৌঁছে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোর PCE ও GDP প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হয়। এছাড়াও, ফেডের কর্মকর্তাদের (বিশেষ করে যাদের ভোটাধিকার রয়েছে) মন্তব্যে যদি তারা জুনে সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন — তাহলে সেটাও ডলারকে সমর্থন করতে পারে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, H4 চার্টে EUR/USD পেয়ারের মূল্য এখন বলিঙ্গার ব্যান্ডের মিড ও লোয়ার লাইন এবং কুমো ক্লাউডের মধ্যে অবস্থান করছে। নিকটতম সাপোর্ট 1.0770 এ অবস্থিত — যা কুমো ক্লাউডের নিচের সীমা এবং H4-এ বলিঙ্গার ব্যান্ডের লোয়ার লাইন। পরবর্তী সাপোর্ট 1.0720-এ অবস্থিত— যা দৈনিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের মিড লাইন। রেসিস্ট্যান্স রয়েছে 1.0870-এর লেভেল — যা H4 চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের মিড লাইন ও কুমো ক্লাউডের ওপরের সীমা, যা কিনা কিজুন-সেন লাইনের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। যদি ক্রেতারা মূল্যকে দিয়ে এই লেভেল ব্রেক করাতে সক্ষম হয় এবং তার ওপরে কনসোলিডেশন নিশ্চিত করতে পারে, তাহলেই কেবল লং পজিশনের কথা ভাবা যেতে পারে।